আপনি আমার কোন্‌খানে
বেড়াই তারি সন্ধানে ॥

নানান রূপে নানা বেশে
ফেরে যেজন ছায়ার দেশে
তার পরিচয় কেঁদে হেসে শেষ হবে কি,
কে জানে ॥

আমার গানের গহন-মাঝে
শুনেছিলেম যার ভাষা
খুঁজে না পাই তার বাসা।

বেলা কখন যায় গো বয়ে,
আলো আসে মলিন হয়ে--
পথের বাঁশি যায় কী কয়ে
বিকালবেলার মূলতানে।





আজি সাঁঝের যমুনায় গো

আজি সাঁঝের যমুনায় গো
তরুণ চাঁদের কিরণতরী
কোথায় ভেসে যায় গো ॥

তারি সুদূর সারিগানে
বিদায়স্মৃতি জাগায় প্রাণে
সেই-যে দুটি উতল আঁখি
উছল করুণায় গো ॥

আজ মনে মোর যে সুর বাজে
কেউ তা শোনে না কি।
একলা প্রাণের কথা নিয়ে
একলা এ দিন যায় কি।

যায় যাবে, সে ফিরে ফিরে
লুকিয়ে তুলে নেয় নি কি রে
আমার পরম বেদনখানি
আপন বেদনায় গো ॥



আনন্দেরই সাগর হতে

আনন্দেরই সাগর হতে
এসেছে আজ বান।
দাঁড় ধ'রে আজ বোস্‌ রে সবাই,
টান রে সবাই টান॥

বোঝা যত বোঝাই করি
করব রে পার দুখের তরী,
ঢেউয়ের 'পরে ধরব পাড়ি--
যায় যদি যাক প্রাণ॥

কে ডাকে রে পিছন হতে,
কে করে রে মানা,
ভয়ের কথা কে বলে আজ--
ভয় আছে সব জানা।

কোন্‌ শাপে কোন্‌ গ্রহের দোষে
সুখের ডাঙায় থাকব বসে।
পালের রশি ধরব কষি,
চলব গেয়ে গান॥




আঁধার রজনী পোহালো

আঁধার রজনী পোহালো,
জগত পূরিল পুলকে।
বিমল প্রভাতকিরণে
মিলিল দ্যুলোকে ভূলোকে ॥

জগত নয়ন তুলিয়া
হৃদয়দুয়ার খুলিয়া
হেরিছে হৃদয়নাথেরে
আপন হৃদয়-আলোকে ॥

প্রেমমুখহাসি তাঁহারি
পড়িছে ধরার আননে--
কুসুম বিকশি উঠিছে,
সমীর বহিছে কাননে।

সুধীরে আঁধার টুটিছে,
দশ দিক ফুটে উঠিছে--
জননীর কোলে যেন রে
জাগিছে বালিকা বালকে ॥

জগত যে দিকে চাহিছে
সে দিকে দেখিনু চাহিয়া,
হেরি সে অসীম মাধুরী
হৃদয় উঠিছে গাহিয়া।

নবীন আলোকে ভাতিছে,
নবীন আশায় মাতিছে,
নবীন জীবন লভিয়া
জয় জয় উঠে ত্রিলোকে ॥





আপনাকে এই জানা আমার

আপনাকে এই জানা আমার
ফুরাবে না।
এই জানারই সঙ্গে সঙ্গে
তোমায় চেনা ॥

কত জনম-মরণেতে
তোমারি ওই চরণেতে
আপনাকে যে দেব, তবু
বাড়বে দেনা ॥

আমারে যে নামতে হবে
ঘাটে ঘাটে,
বারে বারে এই ভুবনের
প্রাণের হাটে।

ব্যাবসা মোর তোমার সাথে
চলবে বেড়ে দিনে রাতে,
আপনা নিয়ে করব যতই
বেচা কেনা ॥




আমরা  মিলেছি আজ মায়ের ডাকে

আমরা  মিলেছি আজ মায়ের ডাকে।
ঘরের হয়ে পরের মতন
ভাই ছেড়ে ভাই ক'দিন থাকে?।

প্রাণের মাঝে থেকে থেকে
'আয়' ব'লে ওই ডেকেছে কে,
সেই  গভীর স্বরে উদাস করে--
আর কে কারে ধরে রাখে?।

যেথায় থাকি যে যেখানে
বাঁধন আছে প্রাণে প্রাণে,
সেই  প্রাণের টানে টেনে আনে--
সেই  প্রাণের বেদন জানে না কে?।

মান অপমান গেছে ঘুচে,
নয়নের জল গেছে মুছে--
সেই  নবীন আশে হৃদয় ভাসে
ভাইয়ের পাশে ভাইকে দেখে ॥

কত দিনের সাধনফলে
মিলেছি আজ দলে দলে--
আজ  ঘরের ছেলে সবাই মিলে
দেখা দিয়ে আয় রে মাকে ॥




আমরা  বসব তোমার সনে

আমরা  বসব তোমার সনে।–
তোমার শরিক হব রাজার রাজা,
তোমার  আধেক সিংহাসনে।।

তোমার দ্বারী মোদের করেছে শির নত –
তারা  জানে না যে মোদের গরব কত ।
তাই  বাহির হতে তোমায় ডাকি,
তুমি  ডেকে লও গো আপন জনে ।।




আমরা নূতন যৌবনেরই দূত

আমরা নূতন যৌবনেরই দূত।
আমরা চঞ্চল, আমরা অদ্ভুত।
আমরা বেড়া ভাঙি,
আমরা  অশোকবনের রাঙা নেশায় রাঙি,
ঝঞ্ঝার বন্ধন ছিন্ন করে দিই-- আমরা বিদ্যুৎ॥

আমরা করি ভুল--
অগাধ জলে ঝাঁপ দিয়ে যুঝিয়ে পাই কূল।
যেখানে ডাক পড়ে    জীবন-মরণ-ঝড়ে
আমরা প্রস্তুত॥






আমরা তারেই জানি তারেই জানি

আমরা  তারেই জানি তারেই জানি
সাথের সাথী,
তারেই করি টানাটানি
দিবারাতি ॥

সঙ্গে তারি চরাই ধেনু,
বাজাই বেণু,
তারি লাগি বটের ছায়ায়
আসন পাতি ॥

তারে হালের মাঝি করি
চালাই তরী,
ঝড়ের বেলায় ঢেউয়ের খেলায়
মাতামাতি।

সারা দিনের কাজ ফুরালে
সন্ধ্যাকালে
তাহারি পথ চেয়ে ঘরে
জ্বালাই বাতি ॥






আমাদের ভয় কাহারে

আমাদের ভয় কাহারে।
বুড়ো বুড়ো চোর ডাকাতে
কী আমাদের করতে পারে।

আমাদের রাস্তা সোজা, নাইকো গলি--
নাইকো ঝুলি, নাইকো থলি--
ওরা আর যা কাড়ে কাড়ুক,
মোদের পাগলামি কেউ কাড়বে না রে॥

আমরা চাই নে আরাম, চাই নে বিরাম,
চাই নে যে ফল, চাই নে রে নাম--
মোরা  ওঠায় পড়ায় সমান নাচি,
সমান খেলি জিতে হারে ॥





আমাকে যে বাঁধবে ধরে

আমাকে যে বাঁধবে ধরে,
এই হবে যার সাধন--
সে কি অমনি হবে।

আমার কাছে পড়লে বাঁধা
সেই হবে মোর বাঁধন--
সে কি অমনি হবে॥

কে আমারে ভরসা করে
আনতে আপন বশে--
সে কি অমনি হবে।

আপনাকে সে করুক-না বশ,
মজুক প্রেমের রসে--
সে কি অমনি হবে।

আমাকে যে কাঁদাবে তার
ভাগ্যে আছে কাঁদন--
সে কি অমনি হবে।