আজি   ঝরো ঝরো মুখর বাদরদিনে
জানি নে,   জানি নে কিছুতে কেন যে মন লাগে না ॥

এই   চঞ্চল সজল পবন-বেগে
উদ্‌ভ্রান্ত মেঘে   মন চায়
মন চায়   ওই বলাকার পথখানি নিতে চিনে॥

মেঘমল্লারে সারা দিনমান।
বাজে ঝরনার গান।
মন হারাবার আজি বেলা,
পথ ভুলিবার খেলা-- মন চায়
মন চায়   হৃদয় জড়াতে কার চিরঋণে॥





আজি দক্ষিণপবনে

আজি দক্ষিণপবনে
দোলা লাগিল বনে বনে ॥

দিক্‌ললনার নৃত্যচঞ্চল মঞ্জীরধ্বনি
অন্তরে ওঠে রনরনি
বিরহবিহ্বল হৃৎস্পন্দনে ॥

মাধবীলতায় ভাষাহারা ব্যাকুলতা
পল্লবে পল্লবে    প্রলপিত কলরবে।

প্রজাপতির পাখায়
দিকে দিকে লিপি নিয়ে যায়
উৎসব-আমন্ত্রণে॥






আজি  প্রণমি তোমারে চলিব

আজি   প্রণমি তোমারে চলিব, নাথ, সংসারকাজে।
তুমি    আমার নয়নে নয়ন রেখো অন্তরমাঝে ॥

হৃদয়দেবতা রয়েছ প্রাণে
মন যেন তাহা নিয়ত জানে,
পাপের চিন্তা মরে যেন দহি দুঃসহ লাজে ॥

সব কলরবে সারা দিনমান
শুনি অনাদি সঙ্গীতগান,
সবার সঙ্গে যেন অবিরত
তোমার সঙ্গ রাজে।

নিমেষে নিমেষে নয়নে বচনে,
সকল কর্মে, সকল মননে,
সকল হৃদয়তন্ত্রে যেন মঙ্গল বাজে ॥





আজি বরিষনমুখরিত শ্রাবণরাতি

আজি   বরিষনমুখরিত শ্রাবণরাতি,
স্মৃতিবেদনার মালা একেলা গাঁথি॥

আজি   কোন্‌ ভুলে ভুলি
আঁধার ঘরেতে রাখি দুয়ার খুলি,
মনে হয় বুঝি আসিছে সে
মোর দুখরজনীর সাথি॥

আসিছে সে ধারাজলে সুর লাগায়ে,
নীপবনে পুলক জাগায়ে।
যদিও বা নাহি আসে   তবু বৃথা আশ্বাসে
ধুলি-'পরে   রাখিব রে   মিলন-আসনখানি পাতি॥ 





আজি বসন্ত জাগ্রত দ্বারে

আজি   বসন্ত জাগ্রত দ্বারে।        
তব     অবগুণ্ঠিত কুণ্ঠিত জীবনে      
কোরো না বিড়ম্বিত তারে॥

আজি   খুলিয়ো হৃদয়দল খুলিয়ো,  
আজি   ভুলিয়ো আপন-পর ভুলিয়ো,
এই      সংগীতমুখরিত গগনে          
তব     গন্ধ তরঙ্গিয়া তুলিয়ো।        

এই      বাহির ভুবনে দিশা হারায়ে    
দিয়ো   ছড়ায়ে মাধুরী ভারে ভারে।  
অতি    নিবিড় বেদনা বনমাঝে রে  
আজি   পল্লবে পল্লবে বাজে রে।      

দূরে     গগনে কাহার পথ চাহিয়া  
আজি   ব্যাকুল বসুন্ধরা সাজে রে।  
মোর    পরানে দখিনবায়ু লাগিছে--  
কারে   দ্বারে দ্বারে কর হানি মাগিছে।

এই      সৌরভবিহ্বলা রজনী        
কার     চরণে ধরণীতলে জাগিছে।  
ওগো    সুন্দর, বল্লভ, কান্ত,        
তব     গম্ভীর আহ্বান কারে॥






আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি

আজি        বাংলাদেশের হৃদয় হতে   কখন আপনি
তুমি এই    অপরূপ রূপে বাহির   হলে জননী!
ওগো        মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
তোমার     দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে॥

ডান হাতে তোর খড়্গ জ্বলে,   বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ,
দুই নয়নে স্নেহের হাসি,   ললাটনেত্র আগুনবরণ।
ওগো        মা, তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে!
তোমার     দুয়ার আজি খুলে গেছে   সোনার মন্দিরে ॥

তোমার     মুক্তকেশের পুঞ্জ মেঘে   লুকায় অশনি,
তোমার     আঁচল ঝলে আকাশতলে   রৌদ্রবসনী!
ওগো        মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
তোমার     দুয়ার আজি খুলে গেছে   সোনার মন্দিরে ॥

যখন         অনাদরে চাই নি মুখে   ভেবেছিলেম দুঃখিনী মা
আছে        ভাঙা ঘরে একলা পড়ে,   দুখের বুঝি নাইকো সীমা।
কোথা সে তোর দরিদ্র বেশ,   কোথা সে তোর মলিন হাসি--
আকাশে আজ ছড়িয়ে গেল   ওই চরণের দীপ্তিরাশি!
ওগো        মা, তোমার কী মুরতি আজি দেখি রে!
তোমার     দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে ॥

আজি        দুখের রাতে সুখের স্রোতে ভাসাও ধরণী--
তোমার     অভয় বাজে হৃদয়মাঝে   হৃদয়হরণী!
ওগো        মা, তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে!
তোমার     দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে ॥ 






আজি বিজন ঘরে নিশীথরাতে

আজি     বিজন ঘরে নিশীথরাতে
আসবে যদি শূন্য হাতে--
আমি     তাইতে কি ভয় মানি!
জানি     জানি, বন্ধু, জানি--
তোমার  আছে তো হাতখানি ॥

চাওয়া-পাওয়ার পথে পথে
দিন কেটেছে কোনোমতে,
এখন    সময় হল তোমার কাছে
আপনাকে দিই আনি ॥

আঁধার থাকুক দিকে দিকে আকাশ-অন্ধ-করা,
তোমার পরশ থাকুক আমার-হৃদয়-ভরা।
জীবনদোলায় দুলে দুলে   আপনারে ছিলেম ভুলে,
এখন    জীবন মরণ দু দিক দিয়ে নেবে আমায় টানি ॥




আজি মম জীবনে নামিছে ধীরে

আজি মম জীবনে নামিছে ধীরে
ঘন রজনী নীরবে নিবিড়গম্ভীরে ॥
জাগো আজি জাগো, জাগো রে তাঁরে লয়ে
প্রেমঘন হৃদয়মন্দিরে ॥