আকাশ আমায় ভরল আলোয়,
আকাশ আমি ভরব গানে।
সুরের আবীর হানব হাওয়ায়,
নাচের আবীর হাওয়ায় হানে॥

ওরে পলাশ, ওরে পলাশ,
রাঙা রঙের শিখায় শিখায়
দিকে দিকে আগুন জ্বলাস--
আমার মনের রাগরাগিণী
রাঙা হল রঙিন তানে॥

দখিন হাওয়ার কুসুমবনের
বুকের কাঁপন থাকে না যে।
নীল আকাশে সোনার আলোয়
কচি পাতার নূপুর বাজে।

ওরে শিরীষ, ওরে শিরীষ,
মৃদু হাসির অন্তরালে
গন্ধজালে শূন্য ঘিরিস--
তোমার গন্ধ আমার কণ্ঠে
আমার হৃদয় টেনে আনে॥





আকাশ জুড়ে শুনিনু ওই বাজে

আকাশ জুড়ে শুনিনু ওই বাজে
তোমারি নাম সকল তারার মাঝে ॥

সে নামখানি নেমে এল ভুঁয়ে,
কখন আমার ললাট দিল ছুঁয়ে,
শান্তিধারায় বেদন গেল ধুয়ে--
আপন আমার আপনি মরে লাজে ॥

মন মিলে যায় আজ ওই নীরব রাতে
তারায়-ভরা ওই গগনের সাথে।

অমনি করে আমার এ হৃদয়
তোমার নামে হোক-না নামময়,
আঁধারে মোর তোমার আলোয় জয়
গভীর হয়ে থাক্‌ জীবনের কাজে ॥




আকাশভরা সূর্য-তারা বিশ্বভরা প্রাণ

আকাশভরা সূর্য-তারা, বিশ্বভরা প্রাণ,
তাহারি মাঝখানে আমি
পেয়েছি মোর স্থান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥

অসীম কালের যে হিল্লোলে
জোয়ার-ভাঁটার ভুবন দোলে
নাড়ীতে মোর রক্তধারায় লেগেছে তার টান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥

ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি বনের পথে যেতে,
ফুলের গন্ধে চমক লেগে উঠেছে মন মেতে,
ছড়িয়ে আছে আনন্দেরই দান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান।

কান পেতেছি, চোখ মেলেছি,
ধরার বুকে প্রাণ ঢেলেছি,
জানার মাঝে অজানারে করেছি সন্ধান,
বিস্ময়ে তাই জাগে আমার গান॥





আজ আকাশের মনের কথা

আজ আকাশের মনের কথা
ঝরো ঝরো বাজে
সারা প্রহর আমার বুকের মাঝে॥

দিঘির কালো জলের 'পরে
মেঘের ছায়া ঘনিয়ে ধরে,
বাতাস বহে যুগান্তরের প্রাচীন বেদনা যে
সারা প্রহর আমার বুকের মাঝে॥

আঁধার বাতায়নে
একলা আমার কানাকানি ওই আকাশের সনে।

ম্লানস্মৃতির বাণী যত  পল্লবমর্মরের মতো
সজল সুরে ওঠে জেগে ঝিল্লিমুখর সাঁঝে
সারা প্রহর আমার বুকের মাঝে॥





খেলা ভাঙার খেলা খেলবি আয়

আজ    খেলা ভাঙার খেলা খেলবি আয়।
সুখের বাসা ভেঙে ফেলবি আয়।
মিলনমালার আজ বাঁধন তো টুটবে,
ফাগুন-দিনের আজ স্বপন তো ছুটবে,
উধাও মনের পাখা মেলবি আয়॥

অস্তগিরির ওই শিখরচূড়ে
ঝড়ের মেঘের আজ ধ্বজা উড়ে।
কালবৈশাখীর হবে যে-নাচন,
সাথে নাচুক তোর মরণবাঁচন,
হাসি কাঁদন পায়ে ঠেলবি আয়॥





আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়

আজ ধানের ক্ষেতে রৌদ্রছায়ায়
লুকোচুরি খেলা রে ভাই, লুকোচুরি খেলা।
নীল আকাশে কে ভাসালে
সাদা মেঘের ভেলা রে ভাই--
লুকোচুরি খেলা॥

আজ    ভ্রমর ভোলে মধু খেতে--
উড়ে বেড়ায় আলোয় মেতে;
আজ    কিসের তরে নদীর চরে
চখা-চখীর মেলা॥

ওরে    যাব না আজ ঘরে রে ভাই,
যাব না আজ ঘরে।
ওরে,    আকাশ ভেঙে বাহিরকে আজ
নেব রে লুট ক'রে॥

যেন    জোয়ার-জলে ফেনার রাশি
বাতাসে আজ ছুটছে হাসি,
আজ    বিনা কাজে বাজিয়ে বাঁশি
কাটবে সকল বেলা॥




আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে

আজ শ্রাবণের পূর্ণিমাতে
কী এনেছিস বল্‌--
হাসির কানায় কানায় ভরা
নয়নের জল॥

বাদল-হাওয়ায় দীর্ঘশ্বাসে
যূথীবনের বেদন আসে--
ফুল-ফোটানোর খেলায় কেন
ফুল-ঝরানোর ছল।
ও তুই   কী এনেছিস বল্‌॥

ওগো,   কী আবেশ হেরি চাঁদের চোখে,
ফেরে সে কোন্‌ স্বপন-লোকে।
মন বসে রয় পথের ধারে,
জানে না সে পাবে কারে--
আসা-যাওয়ার আভাস ভাসে
বাতাসে চঞ্চল।
ও তুই   কী এনেছিস বল্‌॥





সবার রঙে রঙ মিশাতে হবে

আজ     সবার রঙে রঙ মিশাতে হবে।
ওগো আমার প্রিয়,
তোমার     রঙিন উত্তরীয়
পরো পরো পরো তবে॥

মেঘ     রঙে রঙে বোনা,
আজ রবির রঙে সোনা,
আজ     আলোর রঙ যে বাজল পাখির রবে॥

আজ     রঙ-সাগরে তুফান ওঠে মেতে।
যখন     তারি হাওয়া লাগে
তখন রঙের মাতন জাগে
কাঁচা     সবুজ ধানের ক্ষেতে।

সেই     রাতের-স্বপন-ভাঙা
আমার    হৃদয় হোক-না রাঙা
তোমার     রঙেরই গৌরবে॥