তুমি সুন্দর, তাই চেয়ে থাকি প্রিয়,
সেকি মোর অপরাধ ?
চাঁদেরে হেরিয়া কাঁদে চকোরিণী,
বলেনাত' কিছু চাঁদ ॥

চেয়ে চেয়ে দেখি ফোটে যবে ফুল
ফুল বলেনাত’ সে আমার ভুল,
মেঘ হেরি’ ঝুরে চাতকিনী,
মেঘ করেনাত’ প্রতিবাদ ॥

জানে’ সূর্য্যেরে পাবে না,
তবু অবুঝ সূর্য্যমুখী
চেয়ে চেয়ে দেখে তা’র দেবতাকে,
দেখিয়াই সে যে সুখী।

হেরিতে তোমার রূপ-মনোহর
পেয়েছি এ আঁখি, ওগো সুন্দর,
মিটিতে দাও হে প্রিয়তম মোর,
নয়নের সেই সাধ ॥






নয়ন ভরা জল গো তোমার
আঁচল ভরা ফুল ।
ফুল নেব না অশ্রু নেব
ভেবে হই আকুল ॥

ফুল যদি নিই তোমার হাতে
জল রবে গো নয়ন পাতে।
অশ্রু নিলে ফুটবে না আর
প্রেমের মুকুল ॥

মালা যখন গাঁথ তখন
পাওয়ার সাধ যে জাগে,
মোর বিরহে কাঁদ যখন
আরও ভালো লাগে।

পেয়ে তোমায় যদি হারাই--
দূরে দূরে থাকি গো তাই ।
ফুল ফোটায়ে যাই গো চ'লে
চঞ্চল বুলবুল ॥






আমার যাবার সময় হ’ল
দাও বিদায়।
মোছ আঁখি দুয়ার খোলে।
দাও বিদায় ॥

ফোটে যে ফুল আঁধার রাতে
ঝরে ধূলায় ভোর বেলাতে
আমায় তারা ডাকে সাথে
আয়রে আয়
সজল করুণ নয়ন তোল
দাও বিদায় ॥

অন্ধকারে এসেছিলাম
থাকতে আঁধার যাই চ'লে,
ক্ষণিক ভালবেসেছিলে
চিরকালের নাই হ'লে।

হ'ল চেনা হ’ল দেখা
নয়ন-জলে রইল লেখা
দূর-বিরহে ডাকে কেকা, বরষায়।
ফাগুন-স্বপন ভোল ভোল
দাও বিদায় ॥






আসে রজনী সন্ধ্যামণির প্রদীপ জ্বলে।
ছায়া-আঁচল-ঢাকা কানন-তলে ॥

তিমির-দুকূল হলে গগনে
গোধূলি-ধূসর সাঁঝ-পবনে,
তারার মাণিক অলকে বলে ॥

পূজা আরতি ল’য়ে চাঁদের থালায়-
আসিল সে অস্ত-তোরণ নিরালায়।

ললাটের টিপ জ্বলে সন্ধ্যাতারা
গিরি-দরী-বনে ফেরে আপন হারা,
আসে ধীরে বিরহীর নয়ন জলে ॥






(ওরে) শুভ্রবসনা রজনী-গন্ধা,
বনের বিধবা মেয়ে ।
হারানো কাহারে খুঁজিস্
নিশীথ-আকাশের পানে চেয়ে ॥

ক্ষীণ তনুলতা বেদনা-মলিন
উদাস মূরতি ভূষণ-বিহীন,
তোরে হেরি’ ঝরে রাতের অশ্রু
বনের কপোল বেয়ে ॥

( তুই ) লুকায়ে কাঁদিস্ রজনী জাগিস
সবাই ঘুমায় যবে
বিধাতারে যেন বলিস্ “দেবতা,
আমারে লইবে কবে ?”

করুণ-শুভ্র ভালবাসা তোর
সুরভি ছড়ায় সারা নিশি ভোর ।
প্রভাত বেলায় লুটাস্ ধূলায়
যেন কা'রে নাহি পেয়ে ॥






আমি প্রভাতী তারা পূর্বাচলে ।
আশা-প্রদীপ আমি নিশির শিশু-মহলে ॥

রাতের কপোলে আমি ছলছল
অশ্রুর জল,
আমি সরণীতে হিমকণা টলমল
নব দুর্বাদলে ॥

নব-অরুণোদয়ের আমি ইংগীত,
বিহগ কণ্ঠে আমি জাগাই---
শুভ সংগীত ।

আমি অলস-শয়না নব-বধুর ভাঙ্গি ঘুম,
আমি পাণ্ডুর চাঁদের চুম্—
ঊষষির রাঙা কপোলে ॥







জানি জানি প্রিয়   এ জীবনে মিটিবে না সাধ ।
আমি জলের কুমুদিনী ঝরিব জলে
তুমি, দূর গগনে থাকি’ কাঁদিবে চাঁদ ॥

আমাদের মাঝে বঁধু বিরহ-বাতাস
চিরদিন ফেলে যাবে দীরঘ-শ্বাস
পায়না বুকে, কভু পায়না বুকে
তবু মুখে মুখে চাঁদ কুমুদির নামে রটে অপবাদ ॥

তুমি কত দূরে বঁধু   তবু বুকে এত মধু
কেন উথলায় ?
হাতের কাছে রহে   রাতের চাঁদ গো
ধরা নাহি যায় তবু ছোঁওয়া নাহি যায় ।

মরু-তৃষ্ণা ল’য়ে কাঁদে শূন্য হিয়া
সকলে বলে আমি তোমারি প্রিয়া ।
সেই কলঙ্ক-গৌরব সৌরভ দিল গো
মধুর হ’ল মোর বিরহ-বিষাদ  ॥







মদির স্বপনে মম মন-ভবনে জাগো
চঞ্চলা বাসন্তিক।
ওগো ক্ষণিকা, ওগো ক্ষণিকা ॥

মোর গগনে উল্কার প্রায়
চমকি’ ক্ষণেক চকিতে মিলায়
তোমার হাসির যু’ই কণিকা,
ওগো, ক্ষণিকা ॥

পুষ্পধনু তব মন রাঙানো
বঙ্কিম ভুরু হানো হানো।
তোমার উতল উত্তরীয়
(প্রিয়) আমার চোখে ছুইয়ে দিও।

আমি হব ওগো আমি হব
তোমার মালার মণিকা
ওগো ক্ষণিকা ॥








চৈতালী চাঁদিনী রাতে।
নব-মালতীর কলি
মুকুল-নয়ন মেলি'
নিশি জাগে আমারি সাথে ॥

পিয়াসী চকোরীর দিন গোনা ফুরালো,
শূন্য গগনের বক্ষ জুড়ালো,
দখিন-সমীরণ   মাধবী-কঙ্কণ
পরায়ে দিল বনভূমির হাতে ॥

চাঁদিনী তিথি এল
আমারি চাঁদ কেন এল না?
বনের বুকের আঁধার গেল গো
মনের আঁধার কেন গেল না।

এ মধু-নিশি মিলন-মালায়
কাটারি মত আমি বিধিয়া আছি হায় !
সবারি আলয়ে আলোর দেয়ালী
অশ্রু আমারি নয়ন পাতে ॥







নাইয়া! ধীরে চালাও তরণী।
একে ভরা ভাদর তায় বালা
মাতোয়ালা মেঘলা রজনী ॥

হায়! পারে নেওয়ার ছলে নিলে মাঝ নদীতে,
যৌবন-নদী টলমল নারি রোধিতে,
ঐ ব্যাকুল বাতাস   হরি’ নিল লাজ বাস,
তায় চঞ্চল-চিত যে তুমি চাহ বধিতে ।
পায়ে ধরি ছাড় বঁধু, আমি পরের ঘরের ঘরণী ॥

তবুঙ্গ ঘোর রঙ্গ করে, অঙ্গে লাগে দোল
একি এ নেশার ঘোরে তনু মন আঁখি লোল,
দুলিছে নদী, হলে বায়ু, দুলিছে তরী
কেমনে থির রাখি মোর চিত উতরোল ॥
ওঠে ডিঙি পানসী ভরি’ বারি,
কি করি, কিশোরী রমণী ॥