যা’রে হাত দিয়ে মালা দিতে পারো নাই
কেন মনে রাখো তা'রে ?
ভুলে যাও মোরে ভুলে যাও একেবারে ॥

আমি গান গাহি আপনার সুখে
তুমি কেন আসি’ দাঁড়াও সমুখে ।
আলেয়ার মত ডাকিও না আর
নিশীথ অন্ধকারে।
ভুলে যাও মোরে ভুলে যাও একেবারে ॥

দয়া করো, দয়া করো,
আর আমারে লইয়া খেলোনা নিঠুর খেলা,
শত কাঁদিলেও ফিরিবে না,
সেই শুভ লগনের বেলা।

আমি ফিরি পথে তাহে কার ক্ষতি,
তব চোখে কেন সজল মিনতি,
আমি কি ভুলেও কোনদিন এসে
দাঁড়ায়েছি তব দ্বারে ?
ভুলে যাও মোরে ভুলে যাও একেবারে ॥









৩২)

আমার ভুবন কান পেতে রয়
প্রিয়তম তব লাগিয়া।
দীপ নিভে যায় সকলে ঘুমায়
মোর আঁখি রহে জাগিয়া ॥

তারারে শুধাই “কত দেরী আর ?
কখন আসিবে বিরহী, আমার" ?
ওরা বলে “হের পথ চেয়ে তা’র
নয়ন উঠেছে রাঙিয়া” ॥

“আসিতেছে সেকি মোর অভিসারে"
কাঁদিয়া শুধাই চাঁদে,
মোর মুখপানে চেয়ে চেয়ে চাঁদ
নীরবেই শুধু কাঁদে।

ফাগুন-বাতাস করে হায় হায় -
বলে “বিরহিনী তোর নিশি যে পোহায়” ॥
ফুল বলে, “আর জাগিতে পারিনা
ঘুমে আঁখি আসে ভাঙিয়া” ॥








32)


আমার ভুবন কান পেতে রয়
প্রিয়তম তব লাগিয়া।
দীপ নিভে যায় সকলে ঘুমায়।
মোর আঁখি রহে জাগিয়া ॥

তারারে শুধাই “কত দেরী আর ?
কখন আসিবে বিরহী, আমার" ?
ওরা বলে “হের পথ চেয়ে তা’র
নয়ন উঠেছে রাঙিয়া", ॥

“আসিতেছে সেকি মোর অভিসারে"
কাঁদিয়া শুধাই চাঁদে,
মোর মুখপানে চেয়ে চেয়ে চাঁদ
নীরবেই শুধু কাঁদে।

ফাগুন-বাতাস করে হায় হায়—
বলে “বিরহিনী তোর নিশি যে পোহায়” ॥
ফুল বলে, “আর জাগিতে পারিনা
ঘুমে আঁখি আসে ভাঙিয়।” ॥








৩৩)


যবে তুলসি তলায় প্রিয় সন্ধ্যাবেলায়
তুমি   করিবে প্রণাম,
তব দেবতার নাম নিতে ভুলিয়া বারেক
প্রিয়   নিও মোর নাম ॥

একদা এমনি এক গোধূলি বেলা
যেতেছিলে মন্দির-পথে একেলা,
জানিনা কাহার ভুল, তোমার পূজার ফুল
আমি লইলাম ॥

সেই দেউলের পথ, সেই ফুলের শপথ
তুমি ভুলিলে, হায়, আমি ভুলিলাম।
পথের দুধারে সেই কুসুম ফোটে
হায়,   এরা ভোলেনি,
বেঁধেছিলে তরুশাখে লতার যে ডোর
হের,   আজও খোলেনি।
একদ।-এ নীল নভে উঠেছিল চাঁদ,
ছিল অসীম আকাশ-ভরা অনন্ত সাধ,
আজি অশ্ৰু-বাদল সেথা ঝরে অবিরাম ॥









৩৪)

তুমি আমার সকাল বেলার সুর,
হৃদয় অলস উদাস করা অশ্রু-ভারাতুর ।

ভোরের তারার মত তোমার সজল চাওয়ায়
ভালোবাসার চেয়ে সে যে কান্না পাওয়ায়।
রাত্রি শেষের চাঁদ তুমি গো বিদায় বিধূর ॥

তুমি আমার ভোরের ঝরা-ফুল
শিশির-নাওয়া শুভ্র-শুচি পূজারিণীর তুল ।
অরুণ তুমি তরুণ তুমি করুণ তারও চেয়ে
হাসির দেশে তুমি যেন বিষাদ লোকের মেয়ে।
তুমি ইন্দ্র সভার মৌন বীণা নীরব নূপুর ॥







গানগুলি মোর আহত পাথীর সম
লুটাইয়া পড়ে তব পায়ে প্রিয়তম ॥

বাণ-বেঁধা মোর গানের পাখীরে
তুলে নিও প্রিয় তব বুকে ধীরে,
লভিবে মরণ চরণে তোমার
সুন্দর অনুপম ॥

তারা সুরের পাখায় উড়িতেছিল গো নভে,
তব নয়ন-শায়কে বিধিলে তাদের কবে ?
মৃত্যু-আহত কণ্ঠে তাহার
একি এ গানের জাগিল জোয়ার,
মরণ-বিষাদে অমৃতের স্বাদ
আনিলে নিষাদ মম ॥







( মোর) না মিটিতে আশা ভাঙিল খেলা।
জীবন-প্রভাতে এল বিদায়-বেলা ॥

আঁচলের ফুলগুলি করুণ নয়ানে
নিরাশায় চেয়ে আছে মোর মুখ-পানে
বাজিয়াছে বুকে যেন কার অবহেলা ॥

আঁধারের এলোকেশ দু'হাতে জড়ায়ে
যেতে যেতে নিশীথিনী কাঁদে বন-ছায়ে ।
বুঝি দুখ-নিশি মোর   হ’বে না হবে না ভোর
ভিড়িবে না কূলে মোর বিরহের ভেলা ॥







মোর প্রিয়া হবে এস রাণী,
দেব খোঁপায় তারার ফুল।
কর্ণে দোলাব তৃতীয়া-তিথির
চৈতী চাঁদের দুল ॥

কণ্ঠে তোমার পরাব বালিকা,
হংস-সারির দুলানো মালিকা।
বিজলী জরীণ্, ফিতায় বাঁধিব
মেঘ রং এলোচুল ॥

জ্যোছনার সাথে চন্দন দিয়ে
মাখাব তোমার গায়,
রামধনু হ’তে লাল রং ছানি'
আলতা পরাব পায়।

আমার গানের সাত-সুর দিয়া
তোমার বাসর রচিব প্রিয়া।
তোমারে ঘেরিয়া গাহিবে আমার
কবিতার বুলবুল ॥








আধখানা চাঁদ হাসিছে আকাশে,
আধখানা চাঁদ নিচে,
প্রিয়া, তব মুখে ঝলকিছে ।

গগনে জ্বলিছে অগনন তারা,
দুটি তারা ধরণীতে,
প্রিয়া, তব চোখে চমকিছে ॥

তড়িৎ লতার চিড়িয়া আধেক খানি
জড়িত তোমার জরীণ ফিতায় রাণী।
অঝোর ঝরিছে নীল নভে ধারি,
দুইটি বিন্দু তার-ই প্রিয়া, তব আঁখি বরষিছে ॥

মধুর কণ্ঠে বিহগ বিলাপ গাহে
গান ভুলি' তা'রা তব অঙ্গনে চাহে,
তাহার অধিক সুমধুর সুর তব,
চূড়ি-কঙ্কণে ঝনকিছে ॥










কেন   মনোবনে মালতী-বল্লরী দোলে
জানিনা, জানিনা।
কেন   মুকুলিকা ফুটে ওঠে পল্লব-তলে
জানিনা জানিনা ॥

কেন   উম্মিলা-ঝরণার পাশে
সে   আপন মঞ্জরী-ছায়া দেখে হাসে ।
কেন   পাপিয়া “কুহু কুহু” মুহু বোলে ?
জানিনা জানিনা ॥

চৈতালী চাঁপা কয় “মালতী শোন্‌”
“শুনেছিস্ বুঝি মধুকর গুঞ্জন ?”
তাই বুঝি এত মধু সুরভি উথলে মধু-মালতী বনে
জানিনা জানিনা ॥