বলেছিলে তুমি তীর্থে আসিবে
আমার তনুর তীরে।
তুমি আসিলেনা, আশার সূর্য্য
ডুবিল সাগর নীরে ॥

চলে যাই যদি, চিরদিন মনে
তোমার সে কথা রহিবে স্মরণে
শুধু সেই কথা শোনার লাগিয়া
হয়ত আসিব ফিরে ॥

শুধু সেই আশে হয়ত এ তনু
মরণে হবে না লীন,
পথ চেয়ে চেয়ে তব নাম-গেয়ে
বাজাব বিরহ-বীণ।

হের গো আমার যাবার সময় হ’ল ;
তোমার সে কথা মিথ্যা হবে না বল ?
কোন শুভক্ষণে নিমেষের তরে
জড়াবে কণ্ঠ ঘিরে ॥





আরো কত দিন বাকি ?
তোমারে পাওয়ার আগে বুঝি হায় !
নিভে যায় মোর আঁখি ॥

কত আঁখি তারা নিভিয়া গিয়াছে
কাঁদিয়া তোমার লাগি',
সেই আঁখিগুলি তারা হ'য়ে আজো
আকাশে র’য়েছে জাগি'
যেন নীড়হারা পাথী ॥

যত লোকে আমি তোমারি বিরহে,
ফেলেছি অশ্রু জল,
ফুল হ’য়ে সেই অশ্ৰু ছুঁইতে
চাহে তব পদতল ।
সে সাধ মিটিবে না কি ?




ম্লান আলোকে ফুট্‌লি কেন
গোলক-চাঁপার ফুল ।
ভূষণহীনা বনদেবী,
কা’র হ’বি তুই দুল ॥

হার হ'বি কার কবরীতে-
সন্ধ্যারাণী দূর নিভৃতে
ব'সে আছে অভিমানে
ছড়িয়ে এলো চুল ॥

মাটির ধরার ফুলদানিতে
তোর হবে কি ঠাঁই ?
আদর কে আর ক'রবে তোরে-
বসন্ত যে নাই ।

গোলক-চাঁপা খুজিস কারে
কোন গোলকের দেবতারে?
সে দেবতা নাই রে হেথা–
শুন্য যে গোকুল ॥





আমায় নহে গো, ভালবাস শুধু,
ভালবাস মোর গান ।
বনের পাখীরে কে চিনে রাখে
গান হ'লে অবসান ॥

চাঁদেরে কে চায়, জ্যোছনা সবাই যাচে
গীত শেষে বীণা প'ড়ে থাকে ধূলি মাঝে,
তুমি বুঝিবে না, আলো দিতে কত পুড়ে
প্রদীপের প্রাণ ॥

যে কাঁটা-লতার আঁখি জল,
হায, ফুল হয়ে ওঠে ফুটে ;
ফুল নিয়ে তা’র দিয়েছ কি কিছু
শূন্য পত্র পুটে ।

সবাই তৃষ্ণা মিটায় নদীর জলে
কি তৃষ্ণা জাগে সে নদীর হিয়া-তলে
বেদনার মহাসাগরের কাছে
কর কর সন্ধান ৷৷






চেয়ো না সুনয়না  আর চেয়ো না
এ নয়ন পানে।
জানিতে নাইক বাকী  সই, ও আঁখি
কী যাদু জানে ৷৷

একে ঐ চাউনি বাঁকা  সুর্মা আঁকা
তায় ডাগর আঁখি
বধিতে তায় কেন সাধ  যে মরেছে
ঐ আঁখি-বাণে ৷৷

কাননে হরিণ কাঁদে  সলিল ফাঁদে
ঝুরছে শফরী
বাঁকায়ে ভুরুর ধনু  ফুল-অতনু
কুসুম-শর হানে ৷৷

কুণাল কি প’ড়ল ধরা  পীযূষ ভরা
ঐ মুখ-চাঁদে!
কাঁদিছে নার্গিসের ফুল  লাল কপোলের
কমল-বাগানে ৷৷

জ্বলিছে দিবস রাতি  মোমের বাতি
রূপের দেয়ালী।
নিশিদিন তাই কি জ্বলি' প’ড়ছ গলি’
অঝোর নয়ানে ৷৷

মিছে তুই কথার কাঁটায়  সুর বিঁ’ধে হায়!
হার গাঁথিস কবি।
বিকিয়ে যায়রে মালা  আয় নিরালা
আঁখির দোখানে ৷৷